মধ্য মার্চ থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শসার বীজ বপন করলে গাছ খুব বেশি দ্রুত বাড়ে। এসময় দিনের দৈর্ঘ্য ও তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। পাশাপাশি রাতেও গরম পড়ে। দিনের পাশাপাশি রাতে অতিরিক্ত গরম ও লম্বা দিনের কারণে শসা গাছে পুরুষ ফুল বেশি আসে, জালি বা স্ত্রী ফুল কম আসে। আবার যা ফল আসে, অনেক সময় শসা তিতা হয়ে যায়। খুব সহজেই কিছু কৌশল অবলম্বন করে শসা গাছে স্ত্রীফুলের সংখ্যা তথা ফলন সর্বোচ্চ করা যায়।
- ১/ দীর্ঘ দিবস ও তীব্র গরমের সময় (বিশেষত এপ্রিল থেকে আগস্ট) অবশ্যই উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল জাত বাছাই করতে হবে। বীজপাতা ব্র্যাণ্ডের বর্ষণ F1, আইকন F1, প্রফেসি F1, লিগেসি F1 হাইব্রিড শসার জাতগুলো এ সময় খুব ভালো হয়।
এছাড়া মার্চের শেষ পর্যন্ত উপরের জাত গুলোর পাশাপাশি বীজপাতা এর অন্যান্য শসার জাতের বীজ বপন করা যায়। গ্রিন বিউটি F1 শসা নিচের কৌশল অবলম্বন করে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত বপন করা যায়, আবার মধ্য জুলাই থেকে আগাম চাষ করা সম্ভব। গ্রিন বেবি F1 সারা বছর করা যায়। গ্রিন সুইটি F1 ও কাঞ্চন F1 শীতকালে খুব ভালো হয়। - ২/ জমি তৈরির সময় বা চারা বৃদ্ধির সময় কোনো ভাবেই অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার দেয়া যাবে না, তা জৈবসারই হোক আর ইউরিয়া বা ডিএপি আকারেই হোক। জমি তৈরির সময় ইউরিয়া বা ডিএপি একেবারে বাদ রাখতে পারলে খুব ভাল।
- ৩/ জমি তৈরির সময় সারের সাথে শতক প্রতি ৩০ মিলি নাইট্রোফেনল পিজিআর (যেমন সেমকো কোম্পানির লিটোসেন), এবং ৬০ – ৯০ গ্রাম ন্যাপথাইল এসিটিক এসিড পাউডার পিজিআর (যেমন এনএসি কোম্পানির রোটন) প্রয়োগ করতে হবে।
- ৪/ চারা অবশ্যই পাতলা করে লাগাতে হবে যাতে যথেষ্ট পরিমাণ আলো বাতাস চলাচল করে, কারণ এসময় গাছ খুব ঝোপালো হয়। আর আলো না পেলে ও গাছ বাড়ার যায়গা না পেলে জালি ছাড়বে না।
- ৫/ চারা বের হওয়ার পর বীজপাতার পরে প্রথম পাতা বের হলে ১ম বার, এরপর তিন ও চার পাতার মাঝে ২য় বার নিচের হরমোন টি অবশ্যই সঠিক মাত্রায় শেষ বিকালে বর্ধিত কুশিতে (কাণ্ড ও শাখার আগায়) কুয়াশার মত স্প্রে করে দিতে হবে।
হরমোনের নামঃ বীজ বুস্ট ১
স্প্রের জন্য প্রয়োগ মাত্রাঃ প্রতি লিটারে ১ মিলি (২০ ফোঁটা)
- ৬/ ফল আসার আগ পর্যন্ত গাছ দ্রুত বৃদ্ধি করে, এই জাতীয় জিবেরেলিন সমৃদ্ধ ও গ্রোথ প্রোমোটার হরমোন দেয়া যাবে না।
এসময় নাইট্রোফেনল পিজিআর (যেমন সেমকো কোম্পানির লিটোসেন) ৫-৬ পাতায় একবার ও এর পরের সপ্তাহে একবার লিটারে ১ থেকে সোয়া এক মিলি হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকালে স্প্রে করতে হবে। - ৭/ মাচা উঁচা দিতে হবে। প্রয়োজনে লাউ এর মাচার মত উপরে দড়ি দিয়ে দিতে হবে, যাতে গাছ বাইতে পারে।
- ৮/ ১ম তিন পাতা থেকে বের হওয়া পার্শ্ব শাখা কেটে দিতে হবে।
- ৯/ ৪র্থ ও ৫ম পাতা থেকে বের হওয়া পার্শ্ব শাখাতে কুড়ি না এলে সেগুলাও কেটে দিতে হবে ও ১০-১৩ পাতার পর গাছের মূল ডালের আগার কুশি ভেংগে দিতে হবে।
তবে ৪র্থ বা ৫ম পাতার গিঁটে বা পার্শ্ব শাখায় ফলের গুটি বা জালি দেখা গেলে মূল ডালের আগা কাটার বা ঐ শাখা গুলো (৪র্থ ও ৫ম শাখা) কেটে দেয়ার প্রয়োজন নেই। - ১০/ শসার জালি আসা শুরু হলে সেচের শেষে ড্রেনের মাটিতে ডিএপি, এমওপি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সার সঠিক মাত্রায় সুষম ভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে ও সারের সাথে শতক প্রতি প্রায় ১০০ গ্রাম করে ন্যাপথাইল এসিটিক এসিড পাউডার পিজিআর (যেমন এনএসি কোম্পানির রোটন) মিশিয়ে দিতে হবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরে সার দিতে হবে। সার দেয়ার আগে ক্ষেতের সকল ঘাস পরিষ্কার করে নিতে হবে।